
বিদ্যালয় সংস্কারের কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) সাব কম্পোনেন্ট মেইনটেন্যান্স কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৫৪টি বিদ্যালয়ে দুই লাখ করে এক কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুর্যোগকালীন মেরামতের জন্য চারটি বিদ্যালয়ের বিপরীতে দেওয়া হয় দুই লাখ ৫০ হাজার করে মোট ১০ লাখ টাকা।
আরো পড়ুনঃ শিক্ষকদের সুখবর দিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, নীতিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আগে কাজ করবেন। কাজ শেষ হলে একজন সহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত সাপেক্ষে প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষরে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। কিন্তু নামমাত্র কাজ করে টাকার বিনিময়ে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীর কাছ থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে বিল উত্তোলন করে তা তসরুফ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ বেতনে আছেন শিক্ষক, বিদ্যালয়ে নেই
সরেজমিনে বাহাগিলি ডাংগাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ বরাদ্দ ছিল দুই লাখ। সেখানে গত ২০১০-১১ অর্থ বছরে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ওই টাকায় ছাদ ঢালাইসহ পুরো ভবনটি রঙ করেছি। নির্মাণের কয়েক বছরের মাথায় নতুন ভবনের ছাদ দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবনটির কাজ নিম্নমানের হয়েছিল।
আরো পড়ুনঃ একই পরিবারের ৫ শিক্ষক দিয়েই চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক জানান, বরাদ্দের ১৫ শতাংশ টাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও তদারকি কর্মকর্তাকে দিতে হয়েছে। তা না হলে প্রত্যয়ন দেওয়া হয় না। বিল উত্তোলনের পর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ অন্যদের টাকা না দিলে তারাও টর্চার করে। সবাইকে ভাগ দিয়ে যা থাকে সে অনুযায়ী কাজ করতে হয়।
নিতাই ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মেরামত বাবদ দুই লাখ টাকা বিদ্যালয়টির বারান্দার একটু গাঁথুনি ও চুনকাম করে শেষ করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ দেরিতে স্কুলে আসায় প্রধান শিক্ষককে শোকজ
বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জানান, গত অর্থ বছরে এখানে দুর্যোগকালে মেরামত বাবদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশিয়ার রহমান বলেন, আমি বরাদ্দের টাকায় শতভাগ কাজ শেষ করে বিল উত্তোলনের সময় অফিসে কিছু টাকা খরচ হয়। তাই কাজের একটু হেরফের হয়েছে।
মধ্য কালিকাপুর আব্দুল গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ নিয়েও একই অভিযোগ উঠেছে। বরাদ্দের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহারের বিরোধ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুন্নাহার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এছাড়া বাংলাদেশ শিশু সৈনিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানিয়াল পুকুর দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সয়রাগন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেওটগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক বিদ্যালয়ে গিয়ে একই চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফা বেগম বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয় সংস্কার কাজ দেখভাল করার দায়িত্ব সহকারী ক্লাস্টার কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকৌশল দফতরের। আমি তাদের প্রত্যয়ন সাপেক্ষে বিল ছাড় দিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, বিদ্যালয় সংস্কার কাজের দেখভালের দায়িত্ব আমার নয়। আমার কাজ ইস্টিমেট করে দেওয়া। তারপরও আমি দুই-একটি বিদ্যালয়ে একজন সহকারী প্রকৌশলীকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ইস্টিমেট অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় আমি প্রত্যয়ন দেইনি।
উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম বারী পাইলট বলেন, বিদ্যালয় সংস্কার কাজের অনিয়মের বিষয়ে আমার কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে। আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে কাজের মান যাচাই করে বিল ছাড় দিতে বলেছি।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, সরকারি কাজ নীতিমালা অনুযায়ী না করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষা ডটকমের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
------------------------------
প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, বৃত্তি, উচ্চশিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সংবাদ শিরোনাম, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, ছবি, ভিডিও পেতে শিক্ষা ডটকমের ফেইসবুক গ্রুপে ফলো করুন ( ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে )।
------------------------------
শিক্ষা ডটকমের ফেইসবুক পেইজঃ শিক্ষা - Shikkhaa.com | Facebook
0 Response to "বিদ্যালয় সংস্কারের কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ"
Post a Comment