 
বেতনে আছেন শিক্ষক, বিদ্যালয়ে নেই
এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার ত্রিপল্লী শেখ আবু নাসের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এ ঘটনায় শ্রীরামকান্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি ঢালীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক এককভাবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সদস্য ও শিক্ষকদের অগোচরে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতি করছেন। ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গণিত ও বাংলা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে দুটি বিজ্ঞপ্তি দেন। ২৮ এপ্রিল পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলায় উৎপলা বিশ্বাস ও গণিতে সুশান্ত মালাকার নিয়োগ পান। উৎপলা ওই বছরের ৩ মে থেকে ২০১৬ সালের ৬ জুন পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি হলে ৭ জুন অব্যাহতি নিয়ে সেখানে যোগ দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল না। ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর থেকে নিয়োগ কার্যক্রম এনটিআরসির হাতে চলে যায়। কিন্তু উৎপলা অব্যাহতি নিলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা ও রেজল্যুশন ছাড়াই '১০ লাখ টাকার বিনিময়ে' সুতৃষ্ণাকে বাংলার সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত ও বিল ছাড় করতে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
দশম শ্রেণির এক ছাত্র জানায়, পাঁচ বছর ধরে বিদ্যালয়ে পড়লেও সুতৃষ্ণা বর নামে কোনো শিক্ষকের ক্লাস সে পায়নি। এ নামে কাউকে চেনেও না। অভিভাবক বিপ্লব চৌধুরী বলেন, আমার মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এ জন্য নিয়মিত শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও পাঁচ বছরে সুতৃষ্ণা বর নামে কারও নাম শুনিনি। সব শিক্ষককে চিনলেও ওই নামে কারও সঙ্গে পরিচয় হয়নি।
বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক রুমা খানম বলেন, ২০১৯ সালে আমার নিয়োগের পর সুতৃষ্ণা বর নামে কাউকে বিদ্যালয়ে পাঠদান করাতে দেখিনি। ছাত্রছাত্রীরাও চেনে না। গণিতের শিক্ষক সুশান্ত মালাকার বলেন, ২০১৪ সালে আমার ও উৎপলা বিশ্বাসের নিয়োগ হয়। সুতৃষ্ণা নামে কাউকে বাংলার ক্লাস নিতে বা বিদ্যালয়ে দেখিনি। উৎপলা বিশ্বাস বলেন, আমি ২০১৬ সাল থেকে ডুমরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি কয়েকজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নৈশপ্রহরীর বিল, মাধ্যমিক স্বীকৃতি, এমপিওকরণ ও অডিট বাবদ টাকা নিয়েছেন। করোনাকালে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য টাকা নিয়েছেন বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে। নিজের খেয়ালখুশিমতো আসেন। ডিজিটাল হাজিরাও চালু হয়নি। শিক্ষকদের হাজিরা খাতা তাঁর কক্ষে তালাবদ্ধ থাকে।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি ঢালী বলেন, সুতৃষ্ণা বর অস্তিত্বহীন শিক্ষক নন, বৈধভাবেই নিয়োগ পেয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি বিল তুলছেন। এমপিও হতে দেরি হওয়ায় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন, এখন আসবেন। তাঁর নিয়োগে কিছু খরচ হওয়ায় হয়তো অভিযোগ উঠছে।
ওয়েবসাইটে সুতৃষ্ণার জায়গায় স্ত্রীর ছবি দেওয়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, এটি ভুলে হয়েছে, ছবিটি সরিয়ে নেওয়া হবে। বিদ্যালয় চালাতে গেলে কিছু অনিয়ম করতে হয়। এ নিয়ে প্রতিপক্ষ অভিযোগ করেছে। তিনি বলেন, 'এর আগে বিষয়টি নিয়ে এক ডজন সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে কোনো লাভ হবে না।'
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন বলেন, প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 শিক্ষা ডটকমের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
শিক্ষা ডটকমের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
------------------------------
প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, বৃত্তি, উচ্চশিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সংবাদ শিরোনাম, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, ছবি, ভিডিও পেতে শিক্ষা ডটকমের ফেইসবুক গ্রুপে ফলো করুন ( ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে )।
------------------------------
শিক্ষা ডটকমের ফেইসবুক পেইজঃ শিক্ষা - Shikkhaa.com | Facebook
0 Response to "বেতনে আছেন শিক্ষক, বিদ্যালয়ে নেই"
Post a Comment