
আইন বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও পরিধি, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
Friday, March 3, 2023
Comment
১-১. আইন বিজ্ঞান বলতে কি বুঝ?
১-১.১. আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি
১-১.২. সঠিকভাবে আইন বুঝার জন্য জুরিসপ্রুডেন্স পাঠ কতটুকু আবশ্যক / আইনবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা?
১-২. আইন ও আইন বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য আছে কি? আইন বিজ্ঞান কি আইন হতে পৃথক ?
১-৩. আইনবিজ্ঞান কি যুক্তিশাস্ত্র? আইন বিজ্ঞান ও যুক্তিশাস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য ও সম্পর্ক? যুক্তিশাস্ত্র হিসাবে আইন বিজ্ঞান।
১-৪. আইন বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক কি? আলোচনা কর।
১-৫. জুরিসপ্রুডেন্স এর সাথে মনোবিজ্ঞান ও নীতি শাস্ত্রের সম্পর্ক আলোচনা কর।
১-১. আইন বিজ্ঞান বলতে কি বুঝ?
ভাষায় শিক্ষার জন্য যেমন ব্যাকরণ জানার বিশেষ প্রয়োজন, তেমনি আইনের যথাযথ জ্ঞান লাভের জন্য Jurisprudence বা আইনবিজ্ঞান জানাও একান্ত প্রয়োজন।
'Jurisprudence' শব্দটি লিটিল শব্দ' Juris' এবং 'prudentia'থেকে উদ্ভূত।
অর্থাৎ 'Jurisprudence' অর্থ আইনের বিজ্ঞান বা আইনের জ্ঞান।
Jurisprudence এর শাব্দিক অর্থ:
Jurisprudence বিষয়টির সংজ্ঞা দেওয়া বেশ কঠিন।
বিভিন্ন আইন বিজ্ঞানী এর ব্যাখ্যা করেছেন বিভিন্নভাবে। যিনি যে মতাদর্শে বিশ্বাস করেন এর সংজ্ঞা দিয়েছেন তার মতাদর্শের অনুকূলে। বিষয়টি তেমনই হওয়া স্বাভাবিক। যিনি যে দর্শন ধারণ করেন বা যে আদর্শ বিশ্বাস করেন তিনি তার বাইরে যাবেন না। পাশাপাশি তিনি তার দর্শনকে বা আদর্শকে সমাজের অন্য দর্শন বা আদর্শের তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রমাণে সচেষ্ট হবেন।
এ প্রসঙ্গে মরিস ( Morris) এর একটি উক্তি উদাহরণ হিসেবে পেশ করা যেতে পারে- 'ঘোড়া একটি প্রাণী' । এই একটি মাত্র জিনিসকে একজন প্রাণী বিজ্ঞানী দেখেন চতুষ্পদ জন্তু হিসেবে, ভ্রমণকারী দেখেন পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে, কেউ দেখেন রাজ রাজাদের খেলার সামগ্রী হিসেবে, কোন কোন গোত্র দেখেন খাদ্যদ্রব্য হিসেবে।
Jurisprudence এর শাব্দিক অর্থ করতে গিয়ে কেউ বলেছেন 'আইনবিজ্ঞান' কেউ বলেছেন 'আইনবিদ্যা' কেউ বলেছেন 'আইন তত্ত্ব' কেউ বলেছেন 'ব্যবহার তত্ত্ব' কেউ বলেছেন' আইন নির্ণায়ক' কেউ বলেছেন 'নিয়মনিষ্ঠ বিজ্ঞান' ইত্যাদি।
Jurisprudence বা আইন-বিজ্ঞানের সংজ্ঞা:
আইন বিজ্ঞানী অস্টিন (Austin) এর মতে- " যে বিদ্যার সমাজে বিদ্যমান আইন পর্যালোচনা করে তাই হলো আইন বিজ্ঞান"
টি. ই. হল্যান্ড ( T.E. Holland) এর মতে - ' Jurisprudence is the formal science of positive law. অর্থাৎ 'আইন-বিজ্ঞান হল বাস্তব আইনের নিয়মনিষ্ঠ বিজ্ঞান'।
Jurisprudence আইনবিজ্ঞান এমনই এক বিজ্ঞান যা বিষয়ের প্রতিটি দেশের আইন প্রণয়নের মৌলিক নীতি সমূহ নির্ধারণ করে। যুগেযুগে এটি বিশ্বের আইন ব্যবস্থার গতিধারা কে নিয়ন্ত্রণ করে একটি কার্যকর ও গতিশীল বিজ্ঞান হিসেবে অবদান রেখেছে।
১-১.১. আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি:
আইন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা নেই আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি নিয়েও আইন বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে । এর প্রকৃতি কি হবে তা নিয়ে যেমন ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে, তেমনি পরিধি কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে তা নিয়ে একাধিক মতবাদ রয়েছে। নিম্নে আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা করা হলো:
আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি:
১ ) সর্বজনীন বিদ্যা: আইনবিজ্ঞান আইনের মৌলিক নীতিসমূহ ব্যাখ্যা করে এবং বিভিন্ন আইনের বিবরণ সহ তাদের মধ্যে যে ঐক্য বিদ্যমান সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
২) মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ: সামাজিক মূল্যবোধ সাধারণত মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কারণ, নিষ্ঠাবান প্রতিটি মানুষ সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াকে সম্মানজনক মনে করেন। আইনবিজ্ঞান এই মৌলিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা করে।
৩) আইনগত পর্যালোচনা: আইন বিজ্ঞান আইন দ্বারা বিবেচিত আচার আচরণ, প্রভৃতি বিষয় পর্যালোচনাপূর্বক সামাজিক ব্যবস্থাসমূহকে আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করে।
৪) আইনের দর্শন: আইনবিজ্ঞান নতুন কোন বিধি উদঘাটন করে না। বরং পুরাতন বিধিসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে। কাজেই আইনবিজ্ঞানকে আইনের দর্শন বলা হয়।
৫) আইনগত বিধির স্বরূপ উদঘাটন: আইনবিজ্ঞানে আইনগত বিধি-বিধানের প্রকৃতি, আইনগত ধারণা সমূহের অন্তর্নিহিত অর্থ ও আইন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পর্যালোচনা করা হয়। আইন বিজ্ঞান দ্বারা আইনগত বিধি স্বরূপ এবং আইনের সাথে নৈতিকতা বা শিষ্টাচার ইত্যাদির পার্থক্য অনুসন্ধান করা হয়।
পরিশেষে বলতে হয়, প্রখ্যাত আইন বিজ্ঞানী অধ্যাপক প্যাটন আইনবিজ্ঞানের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন যে, 'আইনবিজ্ঞান শুধু একটি দেশের আইন পর্যালোচনা করে না বরং বিশ্বের সমগ্র আইন ব্যবস্থার উপর আলোচনা করে।' কাজেই আইন বিজ্ঞানকে সমাজ দর্শনের প্রতিচ্ছবি বলা যেতে পারে।
আইন বিজ্ঞানের পরিধি:
আইনবিজ্ঞান সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বিচার-বিশ্লেষণ বা পর্যালোচনা করলে আইন-বিজ্ঞানের যে পরিধি বা বিষয়বস্তু পরিলক্ষিত হয় তা নিম্ন উল্লেখ করা হলো:
১) ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তায়: আইনের প্রধান প্রধান লক্ষ্য হলো 'দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন' অর্থাৎ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আইনবিজ্ঞান বিচার প্রশাসন নিয়ে আলোচনা করে এর পরিধিকে ব্যাপকতারও করেছে।
২) স্যামন্ড এর মতে আইন বিজ্ঞানের পরিধি: অধ্যাপক সেমন্ডের মতে আইন বিজ্ঞানের পরিধির মধ্যে আইনের তিন ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে ১) গবেষণামূলক বিশ্লেষণ ২) আইনের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ ৩) আইনের নৈতিক বা দার্শনিক বিশ্লেষণ।
৩) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আলোচনা: প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা পূর্বক সমাজের সাথে এর সম্পর্ক কি তা নিয়ে আলোচনা- পর্যালোচনা করে।
৪) আইনের ভালো-মন্দ পর্যালোচনা: আইনের কোন কোন বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে মঙ্গলজনক আর কোন কোন বৈশিষ্ট্য অমঙ্গলজনক তা পর্যালোচনার মাধ্যমে আইন বিজ্ঞানের পরিধি বিশ্রিত হয়েছে।
৫) মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে সহায়তা: মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই মূলত সমাজে আইন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। আইন মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ করে আইনবিজ্ঞান মানুষের সামাজিক স্বার্থ কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়, সেই সম্পর্কে আলোচনা করে এর পরিধিকে বিস্তৃত করেছে।
৬) আইনের উপর প্রভাব বিস্তার: সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন যুগে যুগে আইনের উপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। রাজনৈতিক প্রভাব, সামাজিক প্রভাব, অর্থনৈতিক প্রভাব, ইত্যাদি । এ সকল প্রভাব ব্যাখ্যার ফলে আইন বিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপকতা হয়েছে।
৭) গত ধারনার ব্যাখ্যা প্রদান: আইন বিচার মানুষের অধিকতর ও কর্তব্য, অবহেলা, মালিকানা, দখল ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ অর্থ যেমন আলোচনা করে তেমনি এর আইনগত অর্থ আলোচনা কর ও বিশ্লেষণ করে যার ফলে আর পরিধি হয়েছে।
৮) ভিন্ন ভিন্ন জ্ঞানের সম্মেলন: আধুনিক ও সভ্য সমাজে বিনির্মাণের সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। যেমন: রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, পৌরনীতি, ধর্মীয় দর্শন বা আদর্শ, সমাজ বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ইত্যাদি। ভিন্ন ভিন্ন এই সকল জ্ঞানের সংমিশ্রণ ও সমাহার আইন বিজ্ঞানের পরিধিকে অধিক থেকে অধিকতর পরিব্যাপ্ত করেছে।
৯) বিভিন্ন মতবাদ বিশ্লেষণ : আইনবিজ্ঞান বিভিন্ন মতবাদ বিশ্লেষণ করে থাকে । যেমন: ঐতিহাসিক মতবাদ , বিশ্লেষণাত্মক মতবাদ, নৈতিক মতবাদ, সমাজতান্ত্রিক মতবাদ , দার্শনিক মতবাদ, তুলনামূলক মতবাদ ইত্যাদি।
পরিশেষ বলা যায় যে আইন বিজ্ঞান যেহেতু সকল আইনের উৎস সেহেতু এই বিজ্ঞানের পরিধি নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এর পরিধি ব্যাপক।
১-১.২. সঠিকভাবে আইন বুঝার জন্য জুরিসপ্রুডেন্স পাঠ কতটুকু আবশ্যক / আইনবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা? আইনবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:
বিভিন্ন কারণে আইন-বিজ্ঞান পাঠ জরুরী । নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:
১) আইনের ব্যাকরণ: কোন ভাষার সঠিকভাবে শিক্ষার জন্য ব্যাকরণ জানতে হয় । তেমনি আইনের যথাযথ জ্ঞানলাভ করার জন্য আইন বিজ্ঞান পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন । আইন বিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করা সম্ভব নয়।
২) আইনের উৎপত্তি সম্পর্কে জানা: আইনবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আইনের উৎপত্তি ক্রমবিকাশ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
৩) বিভিন্ন বিষয়ের আইনগত ব্যাখ্যা: আইনের প্রণীত অনেক শব্দ আছে যা একই শব্দ বিভিন্ন অর্থ বহন করে। এই সকল শব্দের পূর্ণ ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ অনেক সময় আইনে পাওয়া যায় না। আইন-বিজ্ঞান এই সকল শব্দের আইনগত ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।
৪) অন্যান্য বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ক নির্ণয়: আইন বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আইন বিজ্ঞানের সাথে অন্যান্য বিজ্ঞানের সম্পর্ক নির্ণয় করা যায়।
৫) অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: আইন বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিক দেশের প্রতি বা অন্য মানুষের প্রতি তাদের অধিকার ও কর্তব্য কি জানতে পারে।
৬) আইনের শ্রেণীবিভাগ জানা: আইন বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আইনের বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে জানা যায়।
৭) দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: অধিকার ও কর্তব্যের নেই আইন-বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিক দেশের বা অন্য মানুষের প্রতি তাদের দায়িত্ব কি তা জানতে পারে।
৮) প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন: আমি বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আইনের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করা যায়। আইন-বিজ্ঞানকে আইন শিক্ষার 'প্রাথমিক চাবিকাঠি' বলা হয়।
৯) নজির সম্পর্কে জানা: আমি বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে বিভিন্ন নজির সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়।
১০) ন্যায় বিচার সম্পর্কে ধারণা লাভ: আইন প্রয়োগের উদ্দেশ্য হলো সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আইন বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে ন্যায়বিচার সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
১১) আইনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ: বিজ্ঞান পাঠ করলে যথাযথভাবে আইনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা যায়।
১২) আইনের জটিলতম প্রশ্নের ব্যাখ্যা: আইন-বিজ্ঞান পাঠ করলে যথাযথভাবে আইনের বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা যায়।
১৩) দক্ষ আইনজীবী তৈরি: আইন বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আইনজীবীগণ যুক্তিপূর্ণভাবে যে কোন বিষয় উপস্থাপন করতে পারেন। যা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে থাকে।
১৪) দেখো আইন প্রণয়তা তৈরি: আইন বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আইন প্রণেতাগণ জনগণের জন্য মঙ্গলজনক আইন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
১৫) যুক্তি প্রদর্শনের কলাকৌশল জানা: আইনবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে বিভিন্ন যুক্তি বা কলাকৌশল কিভাবে উপস্থাপন করতে হবে সেই সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
১-২. আইন ও আইন বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য আছে কি? আইন বিজ্ঞান কি আইন হতে পৃথক ?
নিম্নে আইন বিজ্ঞান এবং আইনের পার্থক্যসমূহ আলোচনা করা হলোঃ-
১) যে বিজ্ঞান সমাজে প্রচলিত আইন সম্পর্কে বিভিন্ন পর্যালোচনা করে তাকে আইন বিজ্ঞান বলা হয়। আর আইন হলো সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রনীত বিধান যা অমান্য করলে শাস্তির বিধান আছে।
২) ইংরেজি jurisprudence অর্থ আইন বিজ্ঞান। অন্যদিকে ইংরেজি
law অর্থ আইন।
৩) আইনবিজ্ঞানের লক্ষ্য হলো আইনের বিভিন্ন মূলনীতি পর্যালোচনা করা এবং বিভিন্ন শব্দের ব্যাখ্যা করা। অন্যদিকে আইনের লক্ষ্য হলো সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা।
৪) আইন বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন পর্যালোচনা করা। পক্ষান্তরে আইন নির্দিষ্ট ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
৫) আইন বিজ্ঞান নির্দিষ্ট কোন রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অপরদিকে আইন নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
৬) কোন সুনির্দিষ্ট সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনবিজ্ঞান সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইন সৃষ্টি হয়েছে।
৭) আইনবিজ্ঞান মানুষের কোন অধিকার ও দায়-দায়িত্ব সৃষ্টি করে না। অপরদিকে আইন মানুষের অধিকার ও দায়-দায়িত্ব সৃষ্টি করে।
৮) আইন বিজ্ঞানের নীতিমালা গুলো আদালত দ্বারা বলবৎ করা যায় না। কিন্তু আইনকে আদালত দ্বারা বলবৎ করা যায়।
৯) বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনা করে। পক্ষান্তরে আইন বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনা করে।
১০) আইন-বিজ্ঞানের প্রয়োগ ক্ষেত্র সারা বিশ্ব। কিন্তু আইন প্রয়োগের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট রাষ্ট্র।
১১) আইন বিজ্ঞান বিজ্ঞানের একটি শাখা। অপরদিকে আইন বিজ্ঞানের কোন শাখা নয়।
১৩) আইনবিজ্ঞান মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে না। পক্ষান্তরে আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় আইন বিজ্ঞান যুক্তি ধারায় সৃষ্টি হয়েছে এবং তার উপরই প্রচলিত হয় । হবে আইন যুক্তিসাস্ত্রের উপর নির্ভরশীল নয়। কিন্তু বিচারকার্যের ক্ষেত্রে যুক্তি শাস্ত্র কে বাদ দেয়া যায় না আবার যুক্তি মানে হলো কোন নীতি গ্রহণ করা যায় না, যদি তা আইন দ্বারা সমর্থিত না হয়।
১-৩. আইনবিজ্ঞান কি যুক্তিশাস্ত্র? আইন বিজ্ঞান ও যুক্তিশাস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য ও সম্পর্ক? যুক্তিশাস্ত্র হিসাবে আইন বিজ্ঞান।
আইনবিজ্ঞান যুক্তিশাস্ত্র কি না তা জানতে হলে প্রথমে আইন-বিজ্ঞান ও যুক্তিসাস্ত্র সম্পর্কে জানতে হবে
আইনবিজ্ঞান
আইনবিজ্ঞান বা জুরিস প্রোডেন হলো এমন এক বিজ্ঞান যা বিশ্বের প্রতিটি দেশের আইন প্রণয়নের মৌলিক নীতি সমূহ নির্ধারণ করে। যুগে যুগে এটি বিশ্বের আইন ব্যবস্থার গতিরোধকে নিয়ন্ত্রণ করে এটি কার্যকর গতিশীল বিজ্ঞান হিসেবে অবদান রেখেছে।
যুক্তিশাস্ত্র
যুক্তিশাস্ত্র হলো কোন সিদ্ধান্তের সত্যতা বা অসত্যতা প্রমাণের চেষ্টা। কোন মতবাদ সত্য না মিথ্যা তা নিরূপণের চেষ্টা ছাড়াও যুক্তিযুক্তভাবে তার বিশ্লেষণ থাকে যুক্তশাস্ত্র।
পর্যালোচনা-
আইনবিজ্ঞান ও যুক্তি শাস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য -
অনেক আইন বিজ্ঞানীদের মত অনুযায়ী আইন বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ যুক্ত শাস্ত্রের আলোকে করা যায় না। কারণ, যুক্তি শাস্ত্রের প্রক্রিয়া হল অনমনীয় বা কঠোর অপরদিকে আইনের প্রক্রিয়া গুলি যথেষ্ট নমনীয়। কাজেই, আইনের গতিপথ কোন যুক্তি তর্কের উপর নির্ভরশীল নয় বরং মানব জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল। কোন নির্দিষ্ট সূত্রের উপর ভিত্তি করে আইন প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং মানুষের মঙ্গলের জন্য আইনের সৃষ্টি হয়েছে।
আইন বিজ্ঞানের যুক্তিশাস্ত্রের মধ্যে মিল-
আইনবিজ্ঞান ও যুক্তিশাস্ত্র দুটি ভিন্ন বিষয় হলেও এদের মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে। যেমন - কোন চুক্তির মধ্যে দিয়ে দন্ডের বিধান থাকে তবে সেই চুক্তি বলবৎযোগ্য এমন সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারককে এই সম্পর্কিত পূর্বের সিদ্ধান্তগুলো অনুসন্ধান করতে হয়। পূর্বের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বিচারকের এখতিয়ারভুক্ত। তবে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তার পিছনে কি যুক্তি রয়েছে রায় এর মধ্যে তার ব্যাখ্যা থাকতে হবে। এখানে আইনের সাথে যুক্তিসাস্ত্রের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
১-৫. জুরিসপ্রুডেন্স এর সাথে মনোবিজ্ঞান ও নীতি শাস্ত্রের সম্পর্ক আলোচনা কর।
আইনবিজ্ঞান বা Jurisprudence এর সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক -
মনোবিজ্ঞান মানুষের মানুষের মনের অবস্থা নিয়ে কাজ করে। কিভাবে মানুষের মন ভালোর দিকে বা মন্দের দিকে ধাবিত হয় বা আকৃষ্ট হয় এ সকল বিষয় মনোবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। আধুনিক সমাজের অনেক বিষয়ে মনোবিজ্ঞানের রুল প্রয়োগ করে সমাধান করা হয়ে থাকে। মনোবিজ্ঞান একটি মনোদর্শন ও ব্যবহারের বিজ্ঞান। আইন বিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
অপরাধীর অপরাধ আলোচনায় তার মনোভাব নিয়ে আইন বিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ অপরাধ সংগঠনের পেছনে যে মোটিভ রয়েছে তা আইন বিজ্ঞানে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। এই মোটিভ বা মনোভাব সম্পর্কে জানতে হলে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান লাভ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আইনবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান উভয় জ্ঞানের মাধ্যমে অপরাধীর মনোভাব সম্পর্কে জানা সম্ভব ।
পৃথিবীতে যত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তার সবগুলোই মানুষের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এই সকল আইন মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মনোভাব ও মানসিকতা পরিবর্তন করতে হয়। এই বিষয়গুলো একই সাথে আইনবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের আয়তভুক্ত। সুতরাং বলা যায় আইন বিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
আইন বিজ্ঞানের সাথে নীতি শাস্ত্রের সম্পর্ক-
জ্ঞানের একটি শাখা হলো নীতি শাস্ত্র । এটি মানুষের নীতি আচরণের পজিটিভ দিক নিয়ে আলোচনা করে। নীতিশাস্ত্র কে মানবিক আচরণের বিজ্ঞান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
এই আচরণের দুটি দিক রয়েছে- ১) আদর্শ নৈতিক আচরণ ২) পজিটিভ নৈতিক আচরণ
আদর্শিক নৈতিকতা- প্রাকৃতিক আইনের সাথে সম্পর্কিত। এটি মানুষের তৈরি নয়। এটি প্রাকৃতিক নিয়মে চলে।
অন্যদিকে পজিটিভ নৈতিকতা মানুষের সুনির্দিষ্ট নীতির দ্বারা গ্রহণ করেছে। এটি স্থান কাল পাত্র ভেদে ভিন্নরূপ হতে পারে। আইনবিজ্ঞান এই পজিটিভ নৈতিকতার সাথে সম্পর্কিত। যে আচরণগুলো অশোভন তা নৈতিক আচরণ নয়। এই ধরনের আচরণকে আইন স্বীকার করে না । এই সকল নীতিগুলো বলবৎ করার জন্য নীতি শাস্ত্র কে আইনের উপর নির্ভর করতে হয়। যারা এই নীতিগুলোকে বলবধ করেন তাদের নিজেই শাস্ত্র সম্পর্কে বিস্তার জ্ঞান থাকতে হয়। সুতরাং বলা যায় আইন বিজ্ঞানের সাথে নীতি শাস্ত্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
উপসংহার- পরিশেষে বলা যায় যে আইন বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি আইন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করে। তেমনি সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালনে তিনি সচেষ্ট হন। যার ফলে সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর মানুষের আইনবিজ্ঞান পাঠ করা জরুরী।
অপরাধ আইন ও টর্ট আইনের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর। তুমি কি এই ধারণা প্রসঙ্গে একমত যে, নিভৃতি মূলক শাস্তি এবং সংস্কার মূলক শাস্তির মধ্যে একটি সমন্বয় হওয়া উচিত? বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড কি সাংবিধানিকভাবে বৈধ? তুমি কি মৃত্যুদণ্ড ও শাস্তি হিসেবে রাখার পক্ষে?
বিচার প্রশাসন বলতে কি বুঝ? আধুনিক সভ্য সমাজের বিচার প্রশাসনের কোন গুরুত্ব আছে কি? ব্যাখ্যা কর। এভিডেন্স ও গ্রুপের মধ্যকার পার্থক্য দেখাও।
৮। প্রচলিত আইন বলতে কি বুঝ? কতিপয় আইনবিদদের মতে আন্তর্জাতিক আইন ও এক প্রকারের প্রচলিত আইন" তুমি কি এই উক্তির সাথে একমত? তোমার উত্তরের সাপেক্ষে যুক্তি দাও ।
৯। অধীনস্থ আইন বলতে কি বুঝ? ইহা কিভাবে সর্বোচ্চ আইন ও নির্বাহী আইন হতে পৃথক? অবস্থান আইন বিকাশের কারণ কি? ইহা কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়? ইহার সুবিধা ও অসুবিধা গুলো আলোচনা কর।
১০। টিকা-
১। কমন ল এবং ইকুইটি
২। মুল আইন ও পদ্ধতিগত আইন
৩। আইনগত অনুমান ও আইনগত কল্পনা
৪। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সম্পত্তি
৫। রেশিও দেশি ডেন্ডি ও অবিটার ভিকটা
0 Response to "আইন বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও পরিধি, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা"
Post a Comment